গত দুই দিন আগে হাসানের সাথে পরিচয়। আমি হাটঁছিলাম, হাসান হকারী করছিল। ওকে পাশ কাটিয়ে আমি চলেও গিয়েছি কয়েক গজ। শুনলাম বলছে "মাস্ক দুই টাকা"। ঘুরে এসে জিজ্ঞাস করলাম এক প্যাকেটে কয়টা থাকে। বললো পাঁচটা। এক প্যাকেট ১০ টাকা। বললাম ১০ প্যাকেট দেন। খুশী হয়ে ১০ প্যাকেট দিল এবং আরো চারটা খুচরা হাতে ছিল ওগুলোও দিয়ে বললো এই চারটা খুশি হয়ে দিলাম। আমি না করার পরও দিলো।
ভালো লাগলো। জিজ্ঞাস করলাম আর কি করেন না শুধু মাস্ক-ই বিক্রি করেন। বললো সে ফেক্টরীতে কাজ করে। কাজ শেষে এই মাস্ক হকারী করে। সংসারে স্ত্রী এবং দুই বাচ্চা। মাস্ক গুলো ফ্যাক্টরী থেকে ১.২৫/= করে কিনে বিক্রী করে ২ টাকা। যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চলে। কষ্ট হয় কিন্তু চলে।
আরো বললো এইসব মাস্ক অন্যরা ৫ টাকা না বিক্রি করলেই পারে। অন্য হকাররা তার দুই টাকা করে মাস্ক বিক্রী করা পছন্দ না করায় কয়েকবার তার সাথে ঝামেলাও করেছে। পরে পুলিশের সাহায্য নিতে হয়েছে এবং পুলিশ নাকি ওদেরকে সতর্ক করেছে ঝামেলা না করতে।
হাসান বললো, অনেক হকাররা সংসার চালানোর জন্য মাস্ক মিক্রি করছে না। তাদের দরকার নেশার টাকা জোগাড় করার। কিছু টাকা হলে নেশা কিনে, টাকা শেষ আবার হকারী করে। ৫ টাকা করে কয়েকটা বিক্রি করলেই ওদের হয়ে যায়।
কথা কিন্তু মিথ্যে নয়। অহরহ এই ধরণের হকার দেখা যায় কিন্তু সবাই হয়তো নেশাখোর নয়। যেমন, হাসান।
আরো দুই একটা কথা বলে আরো চার প্যাকেট কিনে ওই দিনের জন্য বিদায় নিয়ে নেই।
আজ যখন হাঁটছিলাম ওই একই জায়গায় হাসানের সাথে দেখা। মনে মনে সিদ্বান্ত নিলাম আজ ওর কাছে যা মাস্ক আছে নিয়ে নিবো। আমার লুকায়িত ক্যামেরাও অন ছিলো। আজকের ব্লগে হাসানের সাথে প্রায় আধা ঘন্টা অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে।
তার কাছে যা মাস্ক ছিলো নিলাম সাথে তাকে আমার সাধ্য মতো বকশিশ ও দিলাম। নিতে চায় না কিন্তু জোর করে দিলাম।
একটা খুবই ভালো গুণ দেখলাম হাসানের কাছে। তার পরিচিত এক ছোট ছেলেকে (রাস্তায় পরিচয় না কি যেন ) সে প্রতিদিন কিছু মাস্ক দিয়ে বলে বিক্রি করতে। ছেলেটি যা বিক্রি করে তার তেমন কোনো লাভ হাসান নিজে রাখে না।
দুঃখজনকভাবে হাসানের সাথেই বিদায়ের ৫/১০ মিনিট আগেই আমার ভিডিও রেকর্ডিং বন্ধ হয়ে যায়। ছোট ছেলেটা সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। সে হাসানকে দুই প্যাকেট যা বাকি ছিলো তা দিলো। আর যা বিক্রি করেছিলো তার হিসাব দিলো। হাসান বললো "তোকে কতো দিবো আজকে ?" ছেলেটি বললো যা দিবেন। .. পরে ও বললো ১৭০ দিবেন? হাসান ১৭০ এবৎ তার সাথে আরো ৩০ টাকা দিলো। বললো যাওয়ার সময়ে তোর বাপের জন্য ওষুধ নিয়ে জাবি। আরো কিছু কথা হলো ওদের দুইজনের মধ্যে , আমি পাশেই ছিলাম।
ছোট ছেলেটার বাবা অসুস্থ, হাসানের সহযোগীতায় তার বাবা-মাকে কিছু রোজগার করে দেয়।
বুজতে পারলাম হাসান ছেলেটা ভালো মনের মানুষ। বাকী যে দুই প্যাকেট ছিল তাও নিলাম। বিকাশ থেকেই ১০০০/= তুলে তাকে দিলাম, যদিও সব মিলিয়ে আমার বিল হয়েছিল ৮০০/= এই শেষের ৫/১০ মিনিট রেকর্ড হলো না।
ভিডিও কোয়ালিটি ভালো না, লুকায়ীত ক্যামেরায় এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করছিও না। আমরা এইসব পে ইট ফরওয়ার্ড গুলো হাই রেসুলেশন ক্যামেরা দিয়ে না করে লুকিয়ে করি যাতে যার সাথে কথা বলছি বা যাকে একটু সাহায্য করছি সে যাতে বিব্রত না হয়।
বিদায় নেয়ার আগে আমি হাসানের কাছে অনুমতি নিয়েছে, যে আমি কী তার সাথে এই কথপোকথন অন্য কারো সাথেই শেয়ার করতে পারবো কি না। সে বলেছে অবশই করবেন। অন্য আরো একটা মানুষ যদি এই অভিজ্ঞতা থেকে উৎসাহ পায় তাহলে অন্য আরো একটি হাসান উপকৃত হবে।
আশা করি ভিডিও-এর কথপোকথন গুলো মনোযোগ দিয়ে দেখবেন। হাসানের কাছ থেকে তার নাম্বার নিয়েছি। আমি এক মাসুদুল একবারই হাসানকে সাহায্য করলাম , ১০০ টা মাসুদুল যদি হাসানকে সহযোগীতা করে, মাস্ক কিনে তাহলে হাসানের হয়তো ভাগ্য বদলে যাবে।
ভিডিওতে অনেক কিছুই জানতে পারবেন হাসান সম্পর্কে।
কিছুদিন আগে একটি পোস্ট দেখেছিলাম ফেসবুকে। ব্যাপারটা এমন ছিল যে, কেউ হয়ত বলছে দেশে কর্মসংস্থান এর অভাব, পক্ষান্তরে ঠিক একি অবস্থান থেকে অন্য ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থান এর পাশাপাশি অন্য মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরী করছে। যাই হোক, হাসানের এই উদ্যোগ অবশ্যই শিক্ষনীয় আমাদের জন্য।
খুবই প্রাসঙ্গিক একটা মন্তব্য, ধন্যবাদ।
জিনিসটা এভাবে আমার মাথায় আসে নাই। আসলেই ঠিক, সবাই বলে কর্মসংস্থান নাই – কর্মসংস্থান নাই, বেকার জীবন যাপন করছে। আমি বলবো তাদের ইচ্ছা নাই। কর্ম করতে চাইলেই কর্ম করা যায়। কোনো কর্মই ছোট নয়। আর কর্মের সাথে যদি অন্যদেরও কর্মের সুযোগ করে দিতে পারেন – এই ধরণের চিন্তা করলে আমরা সবাই আমাদের চারপাশটা আরো সুন্দর করতে পারবো।
হাসান অন্তত শুধু নিজের কথা ভাবছে না। ওই ছোট ছেলেটা তার কেউ নয় কিন্তু ছোট ছেলেটাকে একটা কাজে লাগিয়ে দিয়ে সে ওই সংসারটাকে বাঁচাতে সাহায্য করছে। এই ছোট ছেলেটাও হয়তো খারাপ পথে যাওয়া থেকে বেচে যাবে। বেকারত্ব, রোজগারের অভাব মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি মানবিক পথ থেকে সরিয়ে নেয়।
আপনি/আপনারা চাইলে হাসানকে ফোন করতে পারেন। ছেলেটা ভালো কিছু করতে চাইছে তার জন্য, তার পরিবারের জন্য এবং আশপাশের মানুষের জন্য। আপনার একটা ফোন কল, একটু আর্থিক সহযোগীতা অথবা এমনকি কোনো ব্যবসার সুযোগ তাঁর জীবনটাকেই হয়তো পরিবর্তন করে দিবে।